আধুনিকতা
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান যে রাশিয়ার অস্তিত্বের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত এ কথার পিঠে অনেকেই বলে রাশিয়ার আবার অস্তিত্ব কি? কী দিতে পারে রাশিয়া বিশ্বকে? আধুনিক প্রযুক্তিতে কী অবদান তার? এমনকি সে নিজেই বাইরের প্রযুক্তির উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। গুগলের যে সম্পদ আছে রাশিয়ার সেটা নেই।
কথাটা মিথ্যে নয়। তাই তো, কি দিতে পারে রাশিয়া বিশ্বকে? কিন্তু দেখা গেল যখন পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক রঙ বেরঙের স্যাঙ্কশন আরোপ করতে শুরু করল বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ল জ্বালানি সংকট, খাদ্যাভাব হবার সম্ভাবনা, লজিস্টিক ক্রাইসিস, বিশ্ব অর্থনীতি হল রিসেশনের মুখোমুখি। অবশ্য এসব পশ্চিমা বিশ্বের ভুল। রাশিয়ার কোন ভূমিকা নেই এতে। থাকতে পারে না। রাশিয়ার উপর তো বিশ্বের কিছু নির্ভর করে না যদিও ইন্টারন্যাশনাল স্পেশ স্টেশনে যেতে এদের রকেট লাগে, ফ্রান্স, আমেরিকার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র জ্বালানির জন্য এদের উপর অনেকটাই নির্ভর করে।
মার্ক টোয়েন বলেছিলেন জমি কিনতে কারণ তার প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে গেছে। টেকনোলজি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, তবে প্রাকৃতিক সম্পদ ছাড়া সে অচল, অন্তত এখন পর্যন্ত। জীব জগৎ কোন টেকনোলজি ছাড়াই মিলিয়ন বছর দিব্যি টিকে আছে। টেকনোলজি ছাড়াই মানব জাতি হাজার হাজার বছর ধরে টিকে ছিল, থাকবে আরো অনেক দিন। প্রাকৃতিক সম্পদ ছাড়া টেকনোলজি এখনও অসহায়। এখনও তাকে তেল, গ্যাস, বিভিন্ন রকম খনিজ সম্পদের উপর নির্ভর করতে হয়। না হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে স্যাঙ্কশন কেউ টেরই পেত না। হাইটেকের বিশাল বিশাল বসদেরও দিনের শেষে ভাত বা রুটিই খেতে হয়। চিপ, ব্যাংক নোট, অত্যাধুনিক ডিভাইস মনের খিদে মেটায়, পেটের নয়। এক জন গরীব কৃষক, যে বাড়ির উঠানে আলু বা টমেটো বা অন্য কোন ফসল ফলায় ঠিকই দিনের শেষে তার পাতে ভাত জুটবে কিন্তু একজন কোটিপতি তা পারবে না যদি না সে অন্যের উৎপাদিত খাবার না কিনে। তাই কে কার উপর নির্ভরশীল সেটাও আপেক্ষিক। যারা এই সহজ সত্যটা না বোঝে তাদের জীবন দর্শন ষোল আনাই মিছে।
মস্কো, ০৩ অক্টোবর ২০২২
Comments
Post a Comment